পরলোকে জনপ্রিয় ‘আয়না’ নাটকের স্রষ্টা অচিন্ত্য কুমার ভৌমিক
বাংলাদেশ বেতার খুলনা কেন্দ্র’র জনপ্রিয় রম্য নাটিকা ‘আয়না’র রচয়িতা, সরকারি সুন্দরবন মহাবিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর ও ফুলতলার কৃতি সন্তান লেখক ও কবি অচিন্ত্য কুমার ভৌমিক (৭৮) পরোলোক গমন করেছেন।
বাংলাদেশ বেতার খুলনা কেন্দ্র’র জনপ্রিয় রম্য নাটিকা ‘আয়না’র রচয়িতা, সরকারি সুন্দরবন মহাবিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর ও ফুলতলার কৃতি সন্তান লেখক ও কবি অচিন্ত্য কুমার ভৌমিক (৭৮) পরোলোক গমন করেছেন।
শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টায় খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে অসংখ্য ভক্তদের কাঁদিয়ে তিনি শেষ নিঃশাস ত্যাগ করেন। পারিবারিক জীবনে তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রীসহ বহু গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। বরণ্য কথা সাহিত্যিক, কবি, খ্যাতিমান গ্যীতিকার, নাট্যকার ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এ কথা সাহিত্যিকের মৃত্যুতে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে।
অচিন্ত্য কুমার ভৌমিকের স্ত্রী মিতা ভৌমিক বলেন, তিনি খুলনার সুন্দরবন সরকারি কলেজ, যশোর ও সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন কলেজে বাংলার অধ্যাপক ছিলেন। সর্বশেষ ২০০৪ সালে সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
গোপালগঞ্জ জেলার ভাটিয়াপাড়ার বাসিন্দা তার ছোটভাই অপূর্ব কুমার ভৌমিক বলেন, দীর্ঘ ৩ বছর ধরে তিনি কিডনি, হার্ট ও ফুসফুসের সমস্যসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন। শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর অবস্থার অবনতি হলে রাত ৮টায় আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে রাতে তার মৃত্যু হয়।
শনিবার দুপুরে ফুলতলার গ্রামের শ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আকরাম হোসেন, ইউএনও সাদিয়া আফরিন, প্রফেসর আনোয়ারুল কাদির, রূপান্তর পরিচালক স্বপন কুমার গুহ, ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি এ্যাড. মিনা মিজানুর রহমান, অধ্যক্ষ সমীর কুমার ব্রক্ষ্ম, প্রফেসর শংকর কুমার মল্লিক, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সরদার শাহাবুদ্দিন জিপ্পী, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কে এম জিয়া হাসান তুহিন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গাউসুল আজম হাদি, আওয়ামী লীগ নেতা মো. আসলাম খান, মৃনাল হাজরা, আবু তাহের রিপন, ইউপি চেয়ারম্যান শরীফ মোহাম্মদ ভুইয়া শিপলু, সাংবাদিক ও গবেষক বিধান দাশগুপ্ত, ওয়ার্কার্স পার্টির উপজেলা সভাপতি সন্দ্বীপন রায়, বণিক কল্যাণ সোসাইটির সভাপতি রবিন বসু, গাজী নওশের আলী, প্রেসক্লাব সভাপতি তাপস কুমার বিশ্বাস, উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি শামসুল আলম খোকন, সাংবাদিক শেখ মনিরুজ্জামান, সহকারী অধ্যাপক মো. নেছার উদ্দিন, প্রভাষক জাহাঙ্গীর আলম, গৌতম কুন্ডু, রেজোয়ান হোসেন রাজা, হাবিবুর রহমান, অলিপ কুমার বিশ্বাস, তাপস কুমার মজুমদার প্রমুখ।
প্রফেসর অচিন্ত্য কুমার ভৌমিকের আদি নিবাস গোপালগঞ্জ জেলার ভাটিয়াপাড়া এলাকায় হলেও দেশ স্বাধীনের পূর্ব থেকে খুলনার ফুলতলার দামোদর সাহাপাড়া গ্রামে বসবাস করতেন। সমাজের নানা সমস্যা ও অসঙ্গতি, ত্রুটি, বিচিত্র অপরাধের ধরণ প্রভৃতি অত্যন্ত চমৎকারভাবে ‘আয়না’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তুলে ধরে অধ্যাপক অচিন্ত্য কুমার ভৌমিক বেতার শ্রোতাদের হৃদয় জয় করেন। তার ঐ ধারাবাহিক নাটিকা পর্বের প্রধান আকর্ষন ছিলেন সুরোত, ইজ্জত ও ময়না ভাবী চরিত্রগুলো। খুলনা বেতারে আয়না প্রচারের নির্ধারিত দিনে শ্রোতাদের মনে করিয়ে দিতে হতো না। সবার আগে থেকেই শুক্রবার সকাল সোয়া ৮টা হলেই রেডিও খুলে বসে থাকতেন আয়না অনুষ্ঠান শোনার জন্য। সাদা মনের এ মানুষটি খুলনা অঞ্চলের কবি, সাহিত্যিক, লেখক. সাংবাদিক শিক্ষক, তথা সাধারণ মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন।
গাংচিল সাহিত্য পরিষদ কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা অধ্যাপক অচিন্ত্য কুমার ভৌমিকের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে বিবৃতি দিয়েছেন সংগঠনটির সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা উপদেষ্টা অধ্যক্ষ খান আক্তার হোসেন, উপজেলা সভাপতি রহিমা খানম, সহসভাপতি বিবেকানন্দ কুন্ডু, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক রমজান মাহমুদ অরণ্য, সদস্য অনুপ কুমার বিশ্বাস, মারুফ আহমেদসহ অনেকে।
প্রকৌশলনিউজ/এসএআই